Sunday, May 27, 2018

আপনি জানেন কি মাথাব্যথা কেন হয়? মাথাব্যাথা থেকে রক্ষা পেতে আপনি কি করবেন....?????

মাথাব্যাথাঃ মাথাব্যাথা সাধারণত মানুষের একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা।স্বাভাবিকভাবেই শরীরে বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের বহু রোগের কারণে মানুষের মাথাব্যাথার সমস্যায় ভুগতে পারে। তবে অনেকসময় মাথা ব্যাথা দুশ্চিন্তার কারনেও হতে পারে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এবং ভাবের ওঠানামার ফলে যে মাথাব্যথা দেখা দেয় তাকে টেনশন মাথাব্যথা বলে। এ ধরনের মাথাব্যথা মাথার যে কোন পাশেই হয়ে থাকে। এটি আবার কখনও কখনও মাথার পেছনের অংশে এবং ঘাড়ের পেছনের দিকে পর্যন্তও ছড়াতে পারে।


এবার আসুন মাথাব্যাথা কি তাই জেনে নেওয়া যাকঃ
জীবনে কোন না কোন সময় মাথা ব্যাথায় পড়েননি এমন লোক খুবই কম পাওয়া যাবে বা নেই বললেই খুব একটা ভুল হবে না। কারণ মাথা থাকলে যে মাথা ব্যাথাও থাকবে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। দিনের প্রথম ভাগে বা শুরুতে, কাজের সময় এমনকি রাতের ঘুমের সময় মাথা ধরে পুরো দিনটাই মাটি করে দিতে পারে। তাই আমরা মাথাব্যাথা থেকে কীভাবে দূরে থাকা যায় এবং সুস্থ থাকা যাই সে বিষয়ে কিছু পদ্ধতি আপনাদের জানাবো । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মাথাব্যথা বলতে আমরা বুঝি আমাদের মাথা, গলা এবং মেনিঞ্জেস-এর বিভিন্ন স্নায়ু এবং পেশীতে অনুভূত ব্যথাকে সাধারণত বোঝায়।
মাথাব্যথার প্রকেরভেদঃ

মাথাব্যথাকে আবার চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ দুই ভাগে ভাগ করেছেন  প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারী। নিন্মে তার বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
মাথাব্যথা যে শ্রেণীরই হোক না কেন তা যদি মাঝে মাঝেই হয়ে থাকে তবে আমাদের অবশ্যই উচিত হবে কোন না কোন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। কারণ তা না হলে অনেক সময় দেখা যায় খুব ছোট কোন রোগও আসলে বড় কোন রোগকে ডেকে নিয়ে আসে আমাদের জীবনে।
অনিয়মিত খাদ্যভ্যাস,  সাইনুসাইটিস, মাইগ্রেন এমন অনেক কারণেই আমাদের মাথাব্যাথা হয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার মাথাব্যাথা থেকে রেহাই পেতে পেইনকিলারের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। কিন্তু অতিরিক্ত পেইনকিলার খাওয়া মোটেই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়। কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলা মাথাব্যাথা তৈরি করতে পারে, তেমনি কিছু খাবার মাথাব্যাথা কমাতেও সাহায্য করে।
Primary Headache: এই শ্রেণীর মাথাব্যথার মূলত তিনটি কারণ রয়েছেঃ
১.  মাইগ্রেনঃ ‘মাইগ্রেন’ নামক শব্দটির সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না বা পাওয়া খুব মুশকিল। যার হয় সেই কেবল বুজতে পারে এই ব্যথার তীব্রতা কতখানি বেশি। আমাদের সেরেব্রাল কর্টেক্সের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়াই মূলত মাথাব্যাথা জন্য দায়ী। মাইগ্রেনের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে আলো এবং গোলমালের প্রতি অনেক সংবেদনশীলতা, বিভিন্ন বিষ প্রতি বিতৃষ্ণাবোধ, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া এবং মাথার যেকোনো এক পাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হওয়া।
২.  দুশ্চিন্তাঃ আমাদের মাথা এবং গলার বিভিন্ন পেশীতে অতিরিক্ত স্ট্রেসের ফলে অথবা আবেগিক নানা কারণে দুশ্চিন্তাজনিত কারনেই মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এই ধরণের মাথাব্যথাগুলোর সময় মাথায় এক ধরণের ঝিম ধরা অনুভূতি হয় এবং সেই সাথে আমাদের মাথার দু’পাশেই তীব্র ব্যথা হতে থাকে যা প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক। চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ মনে করে থাকেন যে এর সাথে হয়তো মাইগ্রেনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত।
৩.  ক্লাস্টারঃ এ ধরণের মাথাব্যথাগুলো সাধারণত কয়েক সপ্তাহ ধরে একটানা এমনকি কয়েক মাস ধরে নিজেদের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে চলতে থাকে। এদের উৎপত্তিও মাথার যেকোন এক পাশ দিয়েই হয়ে থাকে। এই টাইপের মাথাব্যথার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা না গেলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ মনে করে থাকেন রক্ত প্রবাহের পরিবর্তনের ফলেই এর উৎপত্তি। কারণ অ্যালকোহলের মতো যেসব পানীয় উপাদান আমাদের রক্ত প্রবাহকে প্রভাবিত করে তারা এই ধরণের মাথাব্যথার ক্ষেত্রে আরো উত্তেজক ভূমিকা পালন করে থাকে।
Secondary Headche:
এই শ্রেণীর মাথাব্যথাগুলো মূলত ইনফেকশন,  হাইপোগ্লাইকেমিয়া, জ্বর, মাথায় আঘাত, টিউমার ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। এইগুলা টেনশনাল হেডেক বা দুশ্চিন্তা জনিত মাথাব্যথা। চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ মনে করে থাকেন যে এর সাথে হয়তো মাইগ্রেনের খুব ঘনিষ্ঠ রকম সম্পর্ক রয়েছে। Secondary Headche এর কিছু লক্ষণ নিন্মে দাওয়া হলঃ
১. লক্ষণ ও উপসর্গ
২. প্রথমে মাথা ব্যাথা এবং পরে মাথার পিছনে ব্যাথা আরম্ভ হয়ে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে ছড়িয়ে পরে।
৩. নিস্তেজ চাপ বা ঠেসে ধরার মত প্রচণ্ড ব্যথা, প্রায়ই মাথার চারপাশে একটা সংকুচিত ব্যান্ড হিসাবে বর্ণনা।
৪. শরীরের ঘাড়, কাঁধ, এবং চোয়াল এর মধ্যে পেশী টাইট অনুভব সহ পীড়া বা যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা বোধ করবে।
৫. এই ধরণের মাথাব্যথাগুলোর সময় মাথায় এক ধরণের ঝিম ধরা অনুভূতি হয় এবং সেই সাথে মাথার দু’পাশেই প্রচণ্ড ব্যথা অনুভুত হতে পারে।
৬. আমাদের ঘুম এবং আহারে ভিন্ন ধরনের অসুবিধা দেখা দিতে পারে।
৭. মাথা ব্যথা সাধারণত সপ্তাহব্যাপী বা মাসব্যাপী স্থায়ী হতে পারে এবং ব্যথার তীব্রতা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তবে এতে জ্বর আসবেনা কখনই।
৮. মানসিক চাপে মাথার ব্যথা বাড়তে পারে। পুরুষ, মহিলা সমানভাবে এতে আক্রান্ত হয় বর্তমানে কিছুটা মহিলাদের মধ্যে মাথাব্যাথার চাপটা বেশি দেখা যায় তাও অঞ্চল ও সমাজের উপর নির্ভর করে।
মাথাব্যাথা বা মাইগ্রেনের কারণ:
মাথাব্যাথা বা মাইগ্রেনের কারণ অনেক কিছু আছে। তার মধ্যে কিছু কারন আপনাদের জন্য তুলে ধরা হলঃ
১। হঠাৎ করে খাদ্যাবাস পরিবর্তন করলে মাথাব্যাথা হবার সম্বভনা বেশি থাকে। তাই ধীরে ধীরে খাদ্যতালিকা পরিবর্তন করা আমাদের উচিত।
২। সাধারণত কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রণে মাথাব্যাথা করতে পারে। কেননা তখন ব্রেইন জ্বালানি হিসেবে কার্বোহাইড্রেট ব্যবহার করে থাকে। তাই মস্তিষ্কে যথেষ্ট পরিমাণ কার্বোহাইড্রেটের অভাবে সেই মুহূর্তে মাথাব্যাথা করবে।
৩। আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে মাথাব্যাথা হবে। তাই সবসময় চেষ্টা করতে হবে রক্তে সুগারের পরিমাণ সঠিক মাত্রায় রাখা।
৪। এছাড়া অনিয়মিত খাদ্যগ্রহণ বা দীর্ঘ বিরতি দিয়ে খাওয়া মাথাব্যাথার জন্য দায়ী। র্নিদিষ্ট বিরতিতে খাবার খাওয়া উচিত।
৫। মাথাব্যাথার আরেকটি কারণ হল পানি। আমাদের শরীরে যথেষ্ট পানির সরবারহ না হলে বা না থাকলে মাথাব্যাথা করবে।
৬। পরিবারের যদি কারো মাইগ্রেনের সম্যসা থাকে তাহলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ৩০ শতাংশ এ সম্যমায় ভুগার সম্ভবনা থাকে।
৭। যেকোন ধরণের এলকোহল বা পানীয় মাইগ্রেনের সম্যসায় জন্য অনেকটা দায়ী। তাই যাদের মাইগ্রেনের সম্যসা আছে তারা সব ধরণের পানীয় এড়িয়ে চলা ভাল।
৮। চকলেট বা মিষ্টি জাতীয় যেকোনো খাবার সাধারণত মাথাব্যাথার জন্য দায়ী। প্রায়ই মহিলাদের অতিরিক্ত চাপে বা হরমোনের পরিবর্তনের সময় মিষ্টি জাতীয় খাবারে আগ্রহী দেখা যায়। কিন্তু মাইগ্রেনের রোগীদের জন্য এসব চর্বিযুক্ত খাবার মটেও ঠিক নয়।
৯। আমরা সবাই কফি খেতে খুব পছন্দ করি। কফি আমাদের মধ্যে অনেকটা আসক্তিও তৈরি করে থাকে। তাই যারা নিয়মিত কফি খেতে অভ্যস্ত তারা হঠাৎ কফি ছেড়ে দিলে মাথাব্যাথা করবে এটা খুবই স্বাভাবিক। হঠাৎ কফি ছেড়ে দিলে মাথাব্যথা, বিরক্তসহ আরও অনেক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
১০। প্রাকৃতিক যে চিনি গুলো আছে এই চিনি খুব উপকারী। কারণ উদ্ভিদ ও প্রাণীর শক্তি রাসায়নিকভাবে জমা করে এই চিনি তৈরি হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা যে কৃত্রিম চিনি ও মিষ্টি খাবার খাই এই খাবারগুলো মাথাব্যাথার জন্য দায়ী।


কিছু পরামর্শ সংযোক্ত করে দিলামঃ
১) টেনশন, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা এসব মনের ওপরে অনেকটা চাপ ফেলে, যা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। সারাক্ষণ মানসিক অস্থিরতার মাঝে থাকলে মাথা ব্যথা তো হবেই, এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। দুশ্চিন্তা কমাতে হবে, পেশাগত মানসিক চাপ ঘরে বয়ে আনা যাবে না কখনই। মনকে একটু বিশ্রাম দিন, ঘরে ফিরে মাথা থেকে কাজের কথা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে একান্ত বা প্রিয়জনের সাথে কিছু সময় কাটান।
২) বিশ্রাম নিন পর্যাপ্ত পরিমাণে। গবেষকেরা দেখেছেন ঠিকমতো ঘুম না হলে মাথায় ব্যথা হওয়ার সম্বভনা  থাকতে পারে। কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ঘুম দরকার পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য। কম ঘুমানো, ঘুমের মাঝে বাধা, সাউন্ড স্লিপ না হওয়া থেকে বাঁচতে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। অন্ধকার শব্দহীন ঘরে একটা আরামের ঘুম দিন,  দেখবেন পরের দিন আর মাথা ধরা থাকবে না।
৩) লালসবজি পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রিবোফ্লাভিন, এক ধরণের ভিটামিন বি যা মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যাথায় কাজে দেয়।
৪) তৈলাক্ত মাছ এবং সামুদ্রিক মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারি। এ সকল মাছের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্যাথা কমে আসে।
৫) মাথাব্যাথার জন্য পটাসিয়াম বেশ উপকারি। পাকা কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে আমরা জানি, কিন্তু আলুও এর কম যায় না। মাঝারী আকৃতির একটি সেদ্ধ আলুতে থাকে ৯২৬ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, যা একটি কলায় থাকা পটাসিয়ামের প্রায় দ্বিগুণ।

জেনে নিন নিন শীতকালীন সবজির পরিচিতি । সবজির পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা ...

শীতকালীন সবজি

আমাদের দেশে শীতের সবজি বলতে এক সময় জনপ্রিয় ছিল ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, ব্রোকলি,গাঁজর, লাউ, টমেটো, শিম, আলু, ওলকপিসহ নানান প্রকার সবজি। আর এখন এসব সবজি বারো মাসকাল বাজারে পাওয়া যায়। তবুও শীতেকালে চাষকৃত এই সবজিগুলার কদর কিন্তু এখনও রয়ে গেছে।

জেনে নিন শীতকালীন সবজির পরিচিতি । সবজির পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

সবজি খেতে আমরা কম বেশি সবাই খুব পছন্দ করি। আর শীতকালীন সবজি হবে ত কথায় নাই। কেননা সবজির জন্য সবচেয়ে ভাল সময় হল শীতকাল। আর আমাদের দেশে শীতকালে প্রায় সব সবজি পাওয়া যায়। প্রায় সকল প্রকার শাক সবজিতেই থাকে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা ত্বকের বার্ধক্যরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে, আমাদের ত্বকের সজীবতা ধরে রাখে। এছাড়া প্রায় সব শাক সবজিতে থাকে প্রচুর পানি যা দেহে পানির ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। শাক সবজির এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদানটি হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। শাক সবজির আঁশ ও এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান খাদ্যনালীর ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে

শীতকালীন সবজি

আমাদের দেশে শীতের সবজি বলতে এক সময় জনপ্রিয় ছিল ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, ব্রোকলি,গাঁজর, লাউ, টমেটো, শিম, আলু, ওলকপিসহ নানান প্রকার সবজি। আর এখন এসব সবজি বারো মাসকাল বাজারে পাওয়া যায়। তবুও শীতেকালে চাষকৃত এই সবজিগুলার কদর কিন্তু এখনও রয়ে গেছে।

শীতকালীন কিছু সবজির পরিচিতি ও পুষ্টিগুণ

আমাদের দেশে শীতকালীন শাক-সবজির বীজ ঢাকাসহ প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন বীজ ভাণ্ডার থেকে সংগ্রহ করা যায়। আপনি চাইলে এই সবজির বীজ খুব সহজেই সংগ্রহ করতে পারেন এবং সবজির চাষ করতে পারেন। আসুন আবার দেখে নাওয়া যাক শীতকালীন কিছু সবজির নাম এবং পুষ্টিগুণ।
পালংশাক- শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম হল পালংশাক। যা কিনা উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি শীতকালীন সবজি। পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড। তাই পালংশাক আমাদের শরীরে আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা ছাড়াও এটা হূদরোগ এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পালংশাকের প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহ আমাদের শরীরে ক্যান্সার, বিশেষ করে আমাদের ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাছাড়া পালনশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকার কারনে হাড়কে মজবুত করে তুলে, আমাদের শরীরের কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ফুলকপি- শীতের খুবই সুস্বাদু একটা সবজি হল ফুলকপি। এই ফুলকপিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও সি। এছাড়া আরও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার। ফুলকপিতে আয়রন রয়েছে উচ্চমাত্রায়। আমাদের শরীরে রক্ত তৈরিতে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশু এবং যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য ফুলকপি বেশ উপকারী একটা সবজি। ফুলকপিতে কোনো চর্বির মাত্রা নাই।ফুলকপি তাই কোলেস্টেরলমুক্ত যা কিনা আমাদের শরীরের বৃদ্ধি ও বর্ধনের জন্য উপযোগী।ফুলকপি পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ কার্যকরী। এছাড়া আমাদের শরীরের মূত্রথলি ও প্রোস্টেট, স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধে ফুলকপি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফুলকপিতে থাকা প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন-এ ও সি শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর, কাশি, সর্দি ও টনসিল প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
মূলা- শীতের আরেকটি খুবই পরিচিত সবজি মূলা। আপনি চাইলে মূলা কাঁচা এবং রান্না উভয় অবস্থায় খেতে পারেন। মূলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে। সব থেকে মজার কথা হল যে  এই মূলার পাতায় ভিটামিনের পরিমাণ প্রায় ছয় গুণ বেশি। মূলা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। মূলাতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে। এটি আমাদের শরীরের ওজন হ্রাস করে। মূলা আলসার ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে থাকে। আমাদের শরীরে কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে। আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং শরীরের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও মূলা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
গাজর- গাজর আমাদের দেশে অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু শীতকালীন একটা সবজি, যা আপনি এখন প্রায় সারা বছরই বাজারে পাবেন। তরকারি বা সালাদ হিসেবে গাজর খাওয়া যায়। গাজরে আছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অন্যান্য উপাদান গুলো অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে। গাজরে প্রয়োজনীয় ক্যারোটিনয়েড যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। আপনি যদি গাজরের সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করেন তাহলে ত্বকের মরা কোষ দূর হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
টমেটো- টমেটো আমাদের সবার  জনপ্রিয় একটি সবজি বিশেষ। ক্যালরিতে ভরপুর এই টমাটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, যা আপনার দাঁত ও হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সাধারণত কাঁচা ও পাকা এই দুই অবস্থাতে টমেটো খাওয়া যায়। টমেটোতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন-সি ত্বক ও চুলের রুক্ষভাব অনেকাংশে দূর করে এবং ঠান্ডাজনিত রোগ ভালো করে। আমাদের শরীরের যেকোনো চর্মরোগ, বিশেষ করে স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করতে অনেকাংশে সম্ভব। টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা কিনা প্রকৃতির ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে। টমেটোতে প্রয়োজনীয় একটা উপাদান হল লাইকোপিন যা কিনা আমাদের  শরীরের মাংস পেশিকে করে খুব মজবুত, দেহের ক্ষয় রোধ করতে সক্ষম, আমাদের দাঁতের গোড়াকে করে আরও শক্তিশালী এবং চোখের পুষ্টি জোগায়।
শিম- শিম শীতকালীন একটা সবজি। আমরা কম বেশি সবাই শিম খেতে পছন্দ করি।  শিম  খুবই সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আমিষের একটি ভালো উৎস বটে। এটি প্রধানত সবজি হিসেবে এবং এর শুকনো বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। শীতকালীন এই শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। শিমের আঁশ-জাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে। শিম সাধারণত ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়।রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকাংশে কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে পাকস্থলী ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে এবং পুষ্টি প্রদান করে থাকে। শিমের ফুল সাধারণত রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
ব্রোকলি- ব্রোকলি আমাদের দেশে অনেকটা নতুন একটা সবজি। ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপি হল একটি কপিজাতীয় সবজি। শীতকালীন সবজি হিসেবে ব্রোকলি বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হচ্ছে। ব্রোকলিতে পুষ্টি উপাদান হিসাবে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম। ব্রোকলি খেতে অত্যন্ত উপাদেয়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি সবজি। ব্রোকলি সুধু একটা সবজি হিসাবে নয় এটার স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। তার মধ্যে চোখের রোগ, রাতকানা, অস্থি বিকৃতিসহ প্রভৃতির উপসর্গ দূর করে ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ব্রোকলি কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে থাকে।
বাঁধাকপি- শীতকালীন সবজির মধ্যে বাঁধাকপি একটি সুস্বাদু সবজি। বাধাকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। এই ভিটামিন সি হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সক্ষম। তাছাড়াও বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন আমাদের শরীরের হাড়কে শক্ত ও মজবুত রাখে। শীতকালীন এই সবজি যারা নিয়মিত খায় তারা বয়স জনিত হাড়ের সমস্যা থেকে অনেকাংশে রক্ষা পায়। আপনি যদি ডায়েট করতে চান তাহলে নিয়মিত বাঁধাকপি খান কেননা ওজন কমাতে সহায়ক খাবার বাঁধাকপি।সুধু কি তাই বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। আপনারা যারা ওজন কমাতে চাইছেন, তাদের জন্য নিয়মিত সালাদ খাওয়ার বিকল্প নেই। আর  আপনি চাইলে এখন থেকে প্রতিদিনের সালাদের সাথে রাখুন বাঁধাকপি।এতে করে একটা উপকার হবে আপনার। সালাদে প্রচুর পরিমাণে বাঁধাকপি থাকলে অতিরিক্ত ক্যালোরি বাড়ে না বললেই চলে। বাঁধাকপি দুরারোগ্য ব্যাধি আলসার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। আমাদের শরীরের পাকস্থলির আলসার ও পেপটিক আলসার প্রতিরোধে বাঁধাকপির জুড়ি নেই।
ধনেপাতা- ধনেপাতা এখন বারমাস কাল পাওয়া গেলেও এটা আসলে শীতকালীন সবজি। ধনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ফলিক এসিড যা আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। এই ধনেপাতার ভিটামিন গুলো আপনার ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে থাকে এবং আমাদের মুখের ভেতরের নরম অংশ গুলোকে রক্ষা করে। মুখ গহ্‌বরের দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ধনে পাতার ভিটামিন-এ আমাদের চোখের পুষ্টি জোগায়, রাতকানা রোগ দূর করতে ধনেপাতা বিশেষ ভূমিকা রাখে। কোলেস্টেরলমুক্ত এই ধনেপাতা আমাদের দেহের চর্বির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ধনেপাতায় প্রয়োজনীয় আয়রন আমাদের শরীরের রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে থাকে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতেও ধনেপাতার অবদান অনেক বেশি। এছাড়াও ধনেপাতা তে আছে প্রচুর পরিমাণে-কে। ভিটামিন-কে তে ভরপুর ধনেপাতা হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে আমাদের শরীরকে শক্ত-সামর্থ্য করে। তবে মজার কথা হল যে, ধনেপাতা রান্নার চেয়ে কাঁচা খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। অ্যালঝেইমারস নামে এক ধরনের আমাদের শরীরের মস্তিষ্কের রোগ রয়েছে, যা নিরাময়ে ধনে পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শীতকালীন সময়ে আমাদের ঠোঁট ফাঁটা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে ধনে পাতা যথেষ্ট অবদান রাখে।

১ টি জবা ফুল..

জবা ফুলের গাছ দেখতে ঝোপের মত !  ইহা শুধু বাহ্যিক সৈন্দর্য আর ঘ্রানের জন্যই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনা,,, এর রয়েছে অনেক ঔষধিগুনও! যেমন:  ফুল বিভিন্ন পূজাতে  আমরা কাজে লাগিয়ে থাকি..।
জেমন কালি পূজো .।


১. বমি করতে চাইলে: হঠাৎ কোন কুখাদ্য খাওয়া হয়ে গেলে, যেটা খেতে অভ্যস্থ নয়, যাকে বলা হয় অসাত্ম্য দ্রব্য, যেমন অজান্তে মাছি, চুল অথবা এই ধরনের কোন জিনিস পেটে গিয়েছে, এর পরিণতিতে বমির উদ্রেগ হয়, অথচ বমি হচ্ছে না; এক্ষেত্রে ৪/৫ টি জবা ফুল নিয়ে বোঁটার সঙ্গে যে সবুজ ক্যালিকাস অংশ থাকে, এই অংশ টাকে বাদ দিয়ে ফুল অংশটাকে পানি ও চিনি পরিমাণমত দিয়ে চটকে সরবত করে দিনে ২/১ বার খেলে বমি হয়ে পেট থেকে ওগুলি সব বেরিয়ে যাবে।
২. ঘন ঘন প্রস্রাব : যারা প্রচুর পরিমাণে পানি পান করে আবার ঘন ঘন প্রস্রাব করে অথচ ডায়াবেটিস রোগী নয়, এই ক্ষেত্রে জবা গাছের ছালের রস এক কাপ পানির সাথে পরিমাণমত চিনিসহ মিশিয়ে ৭/৮ দিন খেলে উপকার পাওয়া 
জায..।
৩. অনিয়মিত মাসিকের স্রাব : দুই এক দিন একটু একটু হয়, আবার সময় হয়ে গিয়েছে আদৌ হয়না আবার হয়তো এক মাস বন্ধ হয়ে থাকলো, এ ক্ষেত্রে দু তিনটি পঞ্চমুখী জবা ফুলের কুঁড়ি ও ৩/৪ ইঞ্চি দারুচিনি আধা অথবা এক গ্রাম এক সঙ্গে বেটে সরবত করে কয়েকদিন খেতে হয়। রসের সাথে এক গ্লাস পরিমাণ পানি মিশিয়ে সকালে কিছু খাওয়ার পর ঋতুকালীন সময়ে দিনে একবার করে ৩/৪ দিন মাসিক স্বাভাবিক হওয়া অবধি খেতে হবে।
৬. চোখ উঠা : চোখের কোণে ক্ষত হয়ে পুঁজ পড়ছে। সে ক্ষেত্রে জবা ফুল বেটে চোখের ভিতরটা বাদ দিয়ে চোখের উপর ও নিচের পাতায় গোল করে লাগিয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায়। দিনের যে কোনো সময় এক /দুইটা ফুল বেটে ৭/৮ দিন লাগাতে হবে এবং এক ঘন্টা রাখতে হবে।

৭. হাতের তালুতে চামড়া উঠা : শীত কালে হাতের তালুতে চামড়া উঠে খসখসে হয়ে গেলে জবা ফুল তালুতে মাখলে খুব উপকার পাওয়া যায়। দিনে দুই তিন বার এক /দুইটা ফুল হাতের মধ্যেই ডলে ডলে লাগাতে হবে । লাগিয়ে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করা যাবে। যতক্ষণ সম্ভব রাখতে হব!

ধন্যবাদ খুশি:)